চীনের পর এবার মিয়ানমারও হতাশ করল ভারতকে। সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে একঘরে করতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সমর্থন প্রত্যাশা করেছিল ভারত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকারকে হতাশ করলেন সুচি। শান্তির নোবেলজয়ী এই নেত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সন্ত্রাসবাদকে কোণঠাসা করতে তিনি রাজি। কিন্তু কোনো দেশ বা সংগঠনের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন না তিনি।
তিনদিনের সফরে ভারতে যান সুচি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদকে একঘরে করতে হবে, কোনো দেশ বা ব্যক্তিকে নয়।
আপাত দৃষ্টিতে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অবশ্য সফল। নিরাপত্তার প্রশ্নে নয়াদিল্লির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন সুচি। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের জমিকে কোনো প্ররোচনাতেই ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
পাশাপাশি গতকাল শক্তি, ব্যাংকিং এবং বীমা ক্ষেত্রে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও সই করেছে ভারত-মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানান, ‘‘পূর্ব দেশের এক পুরনো বন্ধু, আমাদের যৌথ প্রগতির অংশীদার মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরকে প্রধানমন্ত্রী আজ স্বাগত জানিয়েছেন।’’ মোদি নিজেও মিয়ানমারকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা ভুটানের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলি যেভাবে পাকিস্তান প্রশ্নে কোমর বেঁধে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে চেষ্টা দেখা যায়নি সুচির মধ্যে। সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাসবাদ গোটা বিশ্বের সমস্যা। একে কোণঠাসা করে নির্মূল করতে হবে। তবে আমি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন বা কোনও দেশের নিরিখে বিষয়টিকে দেখতে চাই না।’’ আসলে সুচির ইঙ্গিত স্পষ্ট। চীনের অবস্থানকে অনুসরণ করেই পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতার পথে যেতে চাইছে না মিয়ানমার। এ বিষয়ে চীন এবং মিয়ানমারের মধ্যে যথেষ্ট বোঝাপড়া আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে বিষয়টি ভারতের পক্ষে কিছুটা অস্বস্তির। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিদ্রোহী সংগঠন ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত যে ‘আক্কা-মূল-মুজাহিদিন’ সংগঠনটি মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়েছে, তার সদস্যরা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নয়াদিল্লির কৌশল ছিল, এই বিষয়টিকে সামনে এনে পাকিস্তান প্রশ্নে মায়ানমারকে পাশে পাওয়া। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করলেও, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে যে সুচি ইসলামাবাদের বিরোধিতা করবেন না, তা আজ তার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
পাঠকের মতামত